খেলাধূলা ও বিনোদন |
||||||||||||||||||||||||||||||
জেলার উল্লেখযোগ্য খেলা ক্রিকেট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিবছর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । এতে খেলার টিমকে কয়েকভাবে ভাগ করা হয় । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উল্লেখ্যযোগ্য অর্জন হলো বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান মেহাম্মদ আশরাফুল হলেন জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলসহ অন্যন্য বিভাগে খেলে থাকেন ।
ফুটবল : অতি প্রাচীন খেলা হিসেবে সারাদেশের মত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়ও ফুটবল অতি জনপ্রিয় । জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতি বছর ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জেলার ফুটবল টুর্নামেন্টগুলোতে জাতীয় দলের খোলাড়ারসহ বিদেশী খেলোয়াড়দের সমাগম দেখা যায় । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অনেক নামীদামী ফুটবলার ছিলেন । তাছাড়া আরো অনেক স্থানে বিদেশী খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
ব্যাডমিন্টন : শীতকালী সময়ে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলায় ব্যাডমিন্টনের জনপ্রিয়তা দেখা যায়। স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিগতভাবে অনেক আয়োজনের মাধ্যমে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
লাঠিখেলা : সাধারণত মোহরম মাসের প্রথম তারিখ থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলার ধুম পড়ে যায়। নাম লাঠিখেলা হলেও প্রকৃতপক্ষে গদা, রামদা, সরকি, কিরিচ ইত্যাদি খেলাও লাঠিখেলার অন্তর্ভূক্ত। এ খেলা চলে ঢাকের শব্দের তালে তালে। এই তালের সাথে তাল মিলিয়ে কোন কোন খেলোয়াড়ের পায়েও মল জাতীয় এক প্রকার অলংকার বাজে। তাঁদের পরনে থাকে মালকোঁচা মারা ধুতি আর গায়ে গেঞ্জি। রণভেরী যেমন আগের দিনে যোদ্ধাদের মনোবল ও উন্মাদনা বাড়িয়ে দিত, তেমনি ঢাকের শব্দেও লাঠিখেলোয়াড়দের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয় কারবালার প্রতীকী আবেগ। এ প্রসঙ্গে আবহমান বাংলার প্রাচীন এ খেলাটির একজন ডাকাসাইটে ওস্তাদের নামোল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি হলেন মৌড়াইল মোল্লাবাড়ির আবদুল ওয়াহাব মীর। আমৃত্যু পল্লী বাংলার প্রিয় এ লাঠিখেলা, মোরগের লড়াই আর পুথি পাঠ নিয়ে ব্যস্ত থেকে এসবের মানোন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন তিনি।
নৌকা বাইচ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে কবে সর্বপ্রথম নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে তা জানা যায়নি । তবে এক বিবরণী থেকে এটুকু অবগত হওয়া যায় যে, সুদূর অতীতকাল থেকে মনসা পূজা উপলক্ষে ভাদ্র মাসের প্রথম তারিখে তিতাসে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । এ অনুষ্ঠানটির প্রাচীনতা সর্ম্পকে ত্রিপুরা জেলা গেজেটীয়ার থেকে জানা যায় যে, ১৯০৮ সালে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ ছিল একটি ঐতিহাসিক প্রতিযোগিতা । ঐ প্রতিযোগিতায় আখাউড়া, আশুগঞ্জ, চান্দুরা এবং কুটির ইংরেজ পাট ব্যবসায়ীরা বহু সোনার মেডেল দিয়ে নৌকা বাইচ প্রতিযোগীদের পুরষ্কৃত করেছিলেন । তাছাড়া কুমিল্লা জেলা গেজেটীয়ার থেকে বৃটিশ শাসনামলে নৌকা বাইচ সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মি: ওয়ারস এর রিপোর্টের বর্ণনায় আরো জানা যায় যে, এখানে নিয়ম-দস্তুর মাফিক কোন নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো না । সাধারণ একটি নৌকা আর একটি নৌকাকে চ্যালেঞ্জ দিত এবং দাঁড়িরা তালে তালে দাঁড় ফেলে পাল্লা দিয়ে নৌকা চালিয়ে নিয়ে যেত । একটি নৌকা আর একটি নৌকাকে পেছনে ফেলে দিতে পারলেই তার জিত হতো । ১৯০৮ সালে কিন্তু আখাউড়ার কয়েকটি পাট কোম্পানীর দেওয়া স্বর্ণপদকের জন্য দস্তুরমত নৌকা বাইচ হয়েছিল এবং তাতে এমন ভীষণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল যে, পুলিশকে বহু কষ্টে শান্তি রক্ষা করতে হয়েছিল । ত্রিশের দশকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর সংলগ্ন তিতাসের বুকে অতি জাঁকজমকের সাথে গণউৎসব এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো । বিজয়ী নৌকাকে মেডেল, কাপ, শীল্ড, পেতলের কলস, পাঁঠা ইত্যাদি ট্রফি দেয়া হতো । নৌকা বাইচ উপলক্ষে লঞ্চ, বিভিন্ন ধরনের নৌকা, কোষা, কলাগাছের ভেলা এমন কি, মাটির গামলাকে পর্যন্ত রং-বেরঙের কাগজের ফুল ইত্যাদি দিয়ে বিচিত্র সাজে সজ্জিত করা হতো ।
গরু দৌড় : মানুষের দৌড় ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গরু, ঘোড়া, উট, কুকুর প্রভৃতি পশুর দৌড়ের প্রচলন রয়েছে । এ দেশেও ইংরেজ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত ঘোড়দৌড়ের প্রচলন ছিল । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার সর্ববৃহৎ গ্রাম রূপসদীর সংস্কৃতির সাধারণ গ্রামবাসীর ঐতিহ্যের এ ধারাটিকে পুরুষানুক্রমে লালন করে চলেছেন । ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ, নবান্ন ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ পালা-পার্বণের দিন ছাড়াও সপ্তাহের বিশেষ একটি নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের বৃন্দাবন হাইস্কুলের মাঠে গরুদৌড়ের অনুষ্ঠান করে থাকেন তাঁরা । গরুর মালিকেরা নির্দিষ্ট দিনে দৌড়ের হৃষ্টপুষ্ট বলদগুলোকে সালুতে, রঙ্গিন পাঠ ও ফুলের মালায় এবং ঘুঙুরে সাজিয়ে ভোর থেকেই বাদ্য-বাজনা সহকারে দৌড়ের মাঠের দিকে এগুতে থাকেন। বলদের সংখ্যা বিশ, পঞ্চাশ, এমন কি একশ ছাড়িয়ে যায় কোন কোন সপ্তাহে । দু’পক্ষের দুটো বলদকে জোয়ালবদ্ধ করে দুটো দড়ি দিয়ে জোয়ালের সাথে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির মই বাঁধা হয় । জোয়ালের মাঝখানে বাঁধা হয় আরেকটা দড়ি । একজন নিপুন চালক এ দড়িটি ধরে মইয়ের উপর দাঁড়ান । অন্য হাতে থাকে একটা পাচন-বাড়ি । হাজার হাজার দর্শকের সোৎসাহ প্রতীক্ষার মধ্যে একটা সঙ্কেতধ্বনি বেজে উঠতেই দৌড় শুরু হয়ে থাকে । তাছাড়াও জাতীয় খেলা হাডুডুসহ বিভিন্ন প্রকার ঐতিহ্যবাহী খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
খেলাধুলার স্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে উল্লেখযোগ্য খেলার স্থানসমূহ হলো –নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম, কাউতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুল মাঠ প্রাঙ্গন, কলেজপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় বডিং মাঠ, হালদারপাড়া ইত্যাদি।
বাৎসরিক খেলা ১। জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২। জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে ফুটবল টুর্নামেন্ট ৩। সদর উপজেলার সুহিলপুর মাঠে অনুষ্ঠিত ফুটবল টুর্নামেন্ট
বিনোদন
|
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস